
‘নাতিগারে কেউ কদ্দুরা দুধ দেয়ন আন্নে লইদে না বায়াজি’
সারাদেশ | ৩১ আগস্ট ২০২৪, শনিবার, ৮:১৫
অনলাইন ডেস্ক
‘বায়াজি নাতিকে কিছু খাইতে ফারে না, কদ্দুরা দুধের লাই কতোজনের কইলাম কেউ দিলো না। পাগল কই বেকে তারাই দিলো, আন্নে আরে কদ্দুরা দুধ লই দেন না, দোয়া করমু বায়াজি।’ নিজের নাতির জন্য দুধ চেয়ে না পেয়ে এভাবেই আক্ষেপ করে জানাচ্ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব জাহানারা বেগম। ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বারোয়ানী গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা জাহানারা বেগম। পানি ঢোকার পর থেকে গত ১০ দিন ধরে তিনি তার মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে জামিলা ও চার বছরের এক নাতনিকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন এলাহীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে। বলেন, মেয়ে ও নাতনিকে নিয়ে অভাবের সংসার। ছোট যে ঘরটিতে তারা থাকতেন তা পানির নিচে। ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারেননি। যেখানে আশ্রয় নিয়েছেন সেই স্কুল আঙিনায় বুক সমান পানি। আশপাশের মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যে খাবার দিয়ে যাচ্ছেন তা দিয়ে তাদের কোনোরকম জীবন কাটছে। তিনি বলেন, ত্রাণের গাড়ি দেখলেই ছুটে যাই।
নাতিনের দুধের প্রয়োজন। কেউ দুধ দিচ্ছে কিনা খোঁজ নিতে। আজ একটি চিকিৎসক প্রতিষ্ঠান ওষুধের সঙ্গে শিশুদের দুধ দিচ্ছিলো। আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি, সবাই পাগল বলে তাড়িয়ে দিয়েছে। আপনি সাংবাদিক আমাকে একটু দুধ নিয়ে দেন।
জাহানারা গ্রামের মতো আশপাশের আরও তিনটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম বিগত ১০ দিনের বেশি সময় ধরে পানিবন্দি। মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসকল গ্রামের বাসিন্দারা। ফেনী সদর উপজেলার শর্শদা ইউনিয়নের দক্ষিণ আবুপুর, উত্তর আবুপুর, কুমিরা, নতুনবাড়ী, পিয়ার আলী মসজিদ, সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের জগরগাঁও, এলাহীগঞ্জ, ধলিয়া বারোয়ানী, উত্তর ডোমুরিয়া, দক্ষিণ ডোমুরিয়া, দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের কৈখালী, ছোট কৈখালী, গৌতম খালিতে কোথাও হাঁটু সমান পানি তো কোথাও কোমর সমান পানি। এলাহীগঞ্জ বাজারে কথা হয় আব্দুল মতিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিনটি ইউনিয়নের সংযোগস্থল এই এলাহীগঞ্জ বাজার। আশপাশের সকল গ্রাম পানিতে ডুবে থাকায় এলাহীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এলাহীগঞ্জ মমতাজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ১৫০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বানভাসি এ মানুষগুলোর চোখে মুখে শুধু হতাশার ছাপ।